কৃত্রিম উপগ্রহের উপাখ্যান এবং গুগল ম্যাপসের জিপিএস সেবা !


৫৭ তম দেশ হিসেবে আমাদের বাংলাদেশ সফল ভাবে "বঙ্গবন্ধু - ১" কৃত্রিম উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠাতে পেরেছে । তাই এ উপলক্ষ্যে আজকের টিউন স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে ।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি সূত্রে গাথা । সেটি হল মধ্যাকর্ষণ শক্তি (Gravitational Force) । ভরের (mess) দিক থেকে যার যত সম্ভার সে বস্তু ততো উত্তরাধিকারী সূত্রে জ্যেষ্ঠ । অর্থাৎ, এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে বৃহৎ বস্তুগুলো তার চেয়ে ছোট বস্তুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে রাখে । সূর্যকে যেমন আমাদের পৃথিবী ঘূর্ণন করে তেমনি । সূর্যের তার সৌর মন্ডলে সর্ব বৃহৎ ।

কৃত্রিম উপগ্রহ (Satellite) :
ডিজিটাল যুগে নেটওয়্যার্ক ছাড়া আমরা কিছুই কল্পনা করতে পারি না । প্রতি ক্ষণেই আমাদের একটি নেটওয়্যার্ক কাভারেজের ভিতরে থাকতে হচ্ছে । মুঠোফোনে কথা বলব , ইন্টারনেট ব্রাউজ করব, লোকেশন সার্চ করব, মেইল করব অর্থাৎ, নিকটবর্তী বা দূরবর্তী আন্তঃযোগাযোগ (Inter-Communication) স্থাপনে আমরা প্রতিনিয়তই নেটওয়্যার্ক ব্যবহার করছি । টেলিভিশন ব্রডকাস্টিংও এ নেটওয়্যার্ক ব্যবহার করা হয় । আর এই সব নেটওয়্যার্কের অন্যতম প্রধান উৎপত্তিস্থল হল স্যাটেলাইট বা বাংলায় উপগ্রহ । পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে অন্য এক প্রান্তে যোগাযোগ স্থাপন করতে আমরা আমাদের হাতের কাছেই ছোট্ট মুঠোফোন, কম্পিউটার বা বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করি । আর এই নেটওয়্যার্ক অদৃশ্য আকারে আমাদের যোগাযোগের ডিভাইসে কাজ করে । যা আমরা দেখতে পাই না, ছুঁতেও পারিনা । এই কমিউনিকেশন সুবিধা আসে স্যাটেলাইট থেকে । শুধুমাত্র যোগাযোগ মাধ্যমে স্যাটেলাইট কাজ করে তা না । এছাড়াও এটি বহু ধরণের কাজ করে থাকে । নিচে দেখুন কৃত্রিম উপগ্রহের কিছু কাজ যে সেবাগুলো আমরা ব্যবহার করি কিন্তু সবাই হয়তো বুঝতে পারি না ।

কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ বলতে সে কোন অরবিটে ভ্রমণ করে তার উপর নির্ভর করে । অর্থাৎ, ভূকেন্দ্রিক (GeoCentric) যে সব অক্ষ রেখায় কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে তার উপর নির্ভর করে । ভূকেন্দ্রিক অরবিট বা কক্ষপথের বিবেচনায় কৃত্রিম উপগ্রহকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয় । নিচে সেগুলোর বিবরণ সহ কার্যপ্রণালী দেয়া হল ।
১. নিম্নভূ কক্ষপথ (Low Earth Orbit-LEO)(১)
চিত্রঃ LEO কক্ষপথ
এই ধরণের কক্ষপথ পৃথিবীর খুবি নিকটে তাই এই কক্ষপথের উপগ্রহগুলো কয়েক ঘন্টার মধ্যে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পারে । বিশেষ করে দ্রুত যোগাযোগ । যেমন, ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদিতে এই ধরণের কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করা হয় । অনুন্নত দেশে টেলি যোগাযোগ ও আন্তঃ যোগাযোগ তৈরীর জন্য এই কৃত্রিম উপগ্রহ বিশেষ করে ব্যবহার করা হয় ।


সুবিধাঃ
  • দ্রুত যোগাযোগ সক্ষম ।
অসুবিধাঃ
  • খুব কম পরিসরের জায়গাকে কেবল কভার করতে পারে ।
  • সংকীর্ণ জীবনকাল (৫-৮ বছর) ।

২. মধ্যভূ কক্ষপথ (Middle Earth Orbit-MEO) (2)
চিত্রঃ MEO কক্ষপথ
এই কক্ষপথকে আই.সি.ও বা ইন্টারমিডিয়েট সার্কুলার অরবিট (Intermidiate Circular Orbit- ICO) ও বলা হয় । এই কক্ষপথ নিম্নভূ কক্ষপথের ঠিক শেষ থেকে আরম্ভ হয় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার উচ্চতা(Altitude) পর্যন্ত এর বিস্তৃতি । এই উপগ্রহ যে কাজে ব্যবহার করা হয়,

  • দিক নির্দেশনা (Navigation)
  • যোগাযোগ (Communication)
  • মহাকাশ গবেষণা (Geodetic/Space Survey)
এই কক্ষপথের উপগ্রহগুলো প্রতি ১২ ঘন্টায় পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে । 

গুগলের নেভিগেশন সিস্টেমঃ
ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল বর্তমানে যে নেভিগেশন সিস্টেম বা বিশ্বঅবস্থান পদ্ধতি (GPS-Global Positioning System) ব্যবহার করছে সেটা তারা এই কক্ষপথের উপগ্রহগুলোকে দিয়ে করছে । আর তা মধ্যভূ কক্ষপথে থাকা প্রায় ১৩টি স্যাটেলাইটের কাছ থেকে ড্যাটা (Data) সংগ্রহ করে । আমরা গুগল ম্যাপ (Google Map) , গুগল আর্থ (Google Earth) , গুগল স্কাই (Google Sky) এইগুলোর মাধ্যমে ওভারভিউ দেখতে পারছি এই কক্ষপথে থাকা স্যাটালাইটগুলোর মাধ্যমে । আর আপনি এটা ভাববেন না যে, এই ১৩টি উপগ্রহ গুগলের বলে । এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলো গুগল জিইও-আই(GEOeye) নামক একটি প্রতিস্থানের কাছ থেকে লাইসেন্স করে ব্যবহার করছে । এই জিপিএস সেবাটি এসেছে ইউ.এস মিলিটারীদের (US Military) কাছ থেকে । তারা সমর রচনার সুবিধার্থে এই সেবাটি চালু করেছিলো যাকে বলা হয় নেভস্টার কন্সট্যালেশন (NavStar Constellation) । পরে একে উন্মুক্ত করা হয়েছিলো এবং তারা জিপিএস সেবা চালু করে । 
চিত্রঃ গুগল ম্যাপস্‌ ন্যাভিগেটর কার (Credit CNN)
গুগল স্ট্রিট নেভিগেশন পদ্ধতিটি তারা তাদের ক্যামেরা কার ব্যবহার করে রেকর্ড করে এবং সকল ড্যাটা গুগল ম্যাপে জমা করে । প্রতিনিয়ত এক হাজারেরো বেশি পরিমান রাস্তা গুগলের গাড়িগুলো রেকর্ড করে গুগল ম্যাপ ইঞ্জিনে জমা করে । যার দরুন আমরা স্ট্রিট ভিউ (Street View) সেবা ব্যবহার করতে পারছি । 
স্থিরভূ কক্ষপথঃ

চিত্রঃ GEO কক্ষপথ
এই কক্ষপথ শুরু হয় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৫,৮৮৬ কিলোমিটার উচ্চতায় এবং তা সর্বোচ্চ উচ্চতা পৃথিবী তার কোন উপগ্রহকে সর্বোচ্চ যতদূর পর্যন্ত আকর্ষণ করে । জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহটি এই কক্ষপথে ছাড়া হয়েছে ।
সুবিধাঃ

  • টিভি স্যাটালাইট সুবিধা ।
  • জিপিএস সুবিধা ।
  • একটি উপগ্রহ পৃথিবীর ৪০% কভার করতে পারে ।
এটির বড় একটি সুবিধা হল এটি পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির । কারণ, পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় একবার নিজে আবর্তিত হয় । আর এই জিইও স্যাটেলাইটগুলোও একবার আবর্তিত হতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয় । তাই এদেরকে স্থিরভূ কক্ষপথের উপগ্রহ বলা হয় । 
অসুবিধাঃ
  • পৃথিবী থেকে অধিক দূরত্বে থাকে বলে ফ্রিকুয়েন্সি দূর্বল ।
  • সিগনাল অনেক পরে প্রেরণ করে । 

নিচে দেখুন একটি উপগ্রহ কি কি পর্যবেক্ষণ করতে পারে ।
পর্যবেক্ষণ (Observation):
  • ভৌগলিক চিত্র পর্যবেক্ষণ (Mapping)
  • জলবায়ু পর্যবেক্ষণ (Weather)
  • বনাঞ্চল পর্যবেক্ষণ (Forest Cover)
  • তুষারপাত পর্যবেক্ষণ (Snow Cover)
  • মহাসাগর ও পৃথিবীর তাপ পর্যবেক্ষণ (Ocean & Earth Temparature)
  • নগর ও পল্লী উন্নয়ণ (Urban & Rural Development) 





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট